ইসকন: চ্যারিটি না আড়ালে অন্য কিছু?

অলাভজনক ধর্মীয় দাতব্য সংস্থাগুলো প্রয়োজনীয় সেবা ও সহযোগিতা যাদের প্রয়োজন তাদের প্রদান করে সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও এই ধরনের সংস্থাগুলো এক ঝাঁক নতুন প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয় যার মধ্যে রয়েছে জনসাধারণের বিশ্বাস বজায় রাখা, আর্থিক সততা নিশ্চিত করা এবং রাষ্ট্রের নিয়ম মেনে কার্যক্রম পরিচালনা করা।

অতঃপর যদি এই অলাভজনক ধর্মীয় দাতব্য সংস্থাগুলো তাদের উদ্দেশ্যে সফল হতে চায়, দীর্ঘস্থায়ীভাবে বাস্তবায়ন করতে চায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার কোনো বিকল্প নাই।

এরকম একটি সংস্থা হচ্ছে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংস্থা বা সংক্ষেপে ইসকন, এক অলাভজনক দাতব্য ধর্মীয় সংস্থা। এ. সি. ভক্তিবেদান্ত স্বামীর দ্বারা ১৯৬৬ সালে যা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং এর হেডকোয়ার্টার মায়াপুর, পশ্চিম বঙ্গ ভারতে অবস্থিত। ইসকনের সারা বিশ্বে রয়েছে অসংখ্য শাখা ও কেন্দ্র যার মধ্যে বাংলাদেশেও রয়েছে এবং এর কার্যক্রমে ভক্তিযোগের চর্চা ও ভগবদগীতার শিক্ষার প্রসারণে প্রাধান্য দেয়। তাছাড়াও বিভিন্ন দাতব্য সেবা যেমন প্রসাদ বিতরণ এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবাও এদের কার্যক্রমের মধ্যে পড়ে।

একটি অলাভজনক দাতব্য সংস্থা হওয়ার কারণে, প্রধানত ইসকনকে জনসাধারণের বিশ্বাস ও দানের উপর করতে হয় যাতে তারা তাদের মিশন পূরণ করতে পারে এবং এর সুফল ছড়িয়ে দিতে পারে। তাই, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা অতীব জরুরি এই বিশ্বাস ধরে রাখার জন্য এবং এটা নিশ্চিত করার জন্য যে সাধারণ ভক্তের টাকার সঠিক ও সদউপায়ে ব্যয় হচ্ছে।

ইসকনের উচিত তাদের অডিট ডাটার সারাংশ জনসাধারণের সামনে প্রকাশ করা। ইদানীংকালে তাদের বিনামূল্যে সেবা কেন্দ্রিক যে মডেল ছিলো তাতে মন্দিরে মন্দিরে ও মন্দিরের বাহিরে ধর্মীয় পণ্য ও সেবার বিনিময়ে অর্থ নেওয়ার তত্ত্ব ঢোকানো হয়েছে তা সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে। মন্দিরের বাহিরেই অসংখ্য লোখ নিরামিষ রেস্তোরাঁ, ধর্মীয় সরঞ্জাম বিক্রির দোকান খুলে বসেছে। এমনকি মন্দিরের ভেতরেও এরকম দোকান আছে। আর এখানকার পণ্যের দাম সাধারণ দোকানগুলোর থেকে অনেক বেশি। কারণ এগুলোর কাস্টমার একশ্রেণির নির্দিষ্ট লোক। ধীরে ধীরে এভাবে অযাচিতভাবে উচ্চমূল্যে পণ্য বিক্রি তাও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ভিতরে এতে জনসাধারণের যে বিশ্বাস অর্জন করেছিল বা করছে তাতে বাধা তৈরি হচ্ছে। আর্থিক অব্যবস্থাপনা, মতের অমিল এর মতো অনেক ইস্যু ধীরে ধীরে উঠে আসছে যা মোটেও এই ধরনের সংস্থার কাছে কাম্য নয়। আদৌ কি এসব আনুষাঙ্গিক ব্যবসার প্রয়োজন ছিলো? সাধারণ মানুষের দানের টাকা কি যথেষ্ট নয় পরিচালনার জন্য? আমরা তো সেটাই জানতে চাই।

মন্দির ভগনানের ঘর। এখানে তো সবার সমান সুযোগ সুবিধা পাওয়া উচিত। একজন ধনী যা খেতে পারবে একজন গরীবও তা খেতে পারবে। তাহলে টাকার প্রসঙ্গ এখানে কেন আসছে? ভালোভাবে খেতে কেন টাকা লাগবে? প্রসাদের বাহিরে কেন আলাদা হোটেল থাকবে মন্দিরের ভেতরে?

যদি স্বচ্ছ ও সঠিক আর্থিক হিসাব ঠিক রাখতে পারে তবেই এই অলাভজনক সংস্থাগুলো তাদের মিশনে সফল হবে নচেৎ দিনশেষে দাতা ভক্তরাই প্রশ্ন তুলবে, “কোথায় গেলো আমার টাকা?”

ট্যাগ:
এই প্রবন্ধটি শেয়ার করুন
মন্তব্য করুন